Kolkata Intellectuals
----------------------
কলকাতায় বিদ্বজনের অভাব নাই । জ্ঞান-অজ্ঞানের সীমানা যতদূর সম্প্রসারিত করা যায়, এই শহরের জল-বাতাস-ধুঁয়াবর্তিত স্ত্রী-পুরুষ পাইলেই তাহার সুযোগ লইয়া থাকেন । তথ্য, তত্ত্ব এবং জ্ঞান সব এক রোয়াকে বসিয়া, এক ঠোঙা হইতে মুড়ি খাইতে খাইতে সকল বিষয়ের চর্চা করেন ।
সর্ব-সমন্বয়ের এমন শহরে সংবাদমাধ্যম বেশ কিছুদিন যাবত্ একটি নূতন শব্দের প্রচলন করিয়াছেন - "বুদ্ধিজীবি" । বিগত ২-৩ বৎসর ধরিয়া মধ্যমধ্যই শুনিতেছি, নানারূপ সংবেদনশীল ঘটনার পক্ষে-বিপক্ষে ইনারা মিছিল করিতেছেন, সংবাদমাধ্যমে মতামত দিতেছেন, "শিক্ষিত"-"মার্জিত" রূপে প্রতিবাদ করিতেছেন । সংবাধমাধ্যমদীয় সংজ্ঞা অনুযায়ী তুলি-কলম যাত্রা-নাটক দূরদর্শন-বায়োস্কোপ ইত্যাদি যাহাদের ধ্যান-জ্ঞান, সেই সকল কলাকুশলী উক্ত দলভুক্ত । উনাদের শুভ ইচ্ছার প্রতি আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা রইলো ।
কেবল ধ্বন্দ হয় এই ভাবিয়াই যে এই প্রকার জাতিভেদের কি প্রয়োজন ছিল ? নিজ নিজ ক্ষেত্রে বুদ্ধি সকল মানুষ প্রয়োগ করিয়া থাকেন, এমনকি সাংসারিক ক্ষেত্রে (পুরুষ)বুদ্ধিজীবিদের ঘরণী অনেক বেশী বুদ্ধিমত্তা । "বুদ্ধিজীবি" শব্দপ্রয়োগে যে প্রচ্ছন্ন অপমান ধ্বনিত হয়, তাহা বড় প্রকট, বেদনাদায়ক । বহুবৎসর আগে এমনই আরেক শব্দের প্রচলন ঘটিয়াছিল উক্তমাধ্যমকর্ত্তৃক - "জীবনমুখী গান" !!! সেই সময় সাহস করিয়া জনৈকা সুবিখ্যাত শিল্পী প্রতিবাদ করিয়াছিলেন - "আমরা কি মরণমুখী গান গাই ?" (অপ্রাসঙ্গিক হইলেও পুলকিত হইতে হয় জানিয়া যে, মন্ত্যবের কিছু দিন পরেই উনি এক জীবনমুখী গায়কের সহিত একই মঞ্চে অনুষ্ঠানে অংশ নেন) ।
যে শহরে পৃথিবীর অপর প্রান্তের ঘটনার প্রতিবাদে ধিক্কারমিছিল হয়, যে শহরে ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় নিম্নমানের প্রদর্শনের জন্য স্বদলের নিন্দা অথবা উচ্চমানের প্রদর্শনের জন্য বিপক্ষদলের বাহবা সর্বজনবিদিত, যে শহরে দেশি-বিদেশি সকল কৃতীজন সমাদৃত - এমন কলকাতা শহরে জনকতক মনুর সন্তানকে "বুদ্ধিজীবি"-র মুকুট পরানো হইল, অথচ তাহার কোনে প্রতিবাদ হইল না, ইহাই আশ্চর্য সৃষ্টি করে । বুদ্ধিজীবিরাও এই অলীক শ্রেণীভেদের ক্ষীণতম প্রতিবাদ পর্যন্ত করেন নাই; artists and academicians are not the same as intellectuals - যাহারা ইহা বোঝেন না অথবা না বুঝিবার ভণিতা করেন, তাহাদের কি বুদ্ধিজীবি বলা স্ববুদ্ধির পরিচয় ?
No comments:
Post a Comment